ক্লাউড স্টোরেজ হলো অনলাইন স্টোরেজ। এটি এমন একটি অনলাইন সার্ভিস যার মাধ্যমে অনলাইনের অসংখ্য ব্যবহারকারী তাদের সুবিশাল তথ্যভান্ডার দীর্ঘদিন ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে পারে । ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেই স্টোরেজের মধ্যে ফাইল সংরক্ষণ করা যায়। ইন্টারনেট বা ওয়েবে সংযুক্ত হয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারের সার্ভারে নিরাপদভাবে তথ্য সংরক্ষণ করার পদ্ধতিই হলো ক্লাইড স্টোরেজ (Cloud Storage)। এটি এমন একটি শক্তিশালী সার্ভার কম্পিউটার যেখানে ব্যবহারকারী নিরাপদে তথ্য সংরক্ষণ এবং নিজের প্রয়োজন মতো তথ্য ডাউনলোড করতে পারে।
যেসব কোম্পানি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস সুবিধা দিয়ে থাকে তাদের সার্ভিস প্রোভাইডার বা ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস প্রোভাইডারও বলে। ক্লাউড স্টোরেজ সেবাদানকারী অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে আমরা একটি বা দুটি ব্যবহার করেছি কিন্তু জানি না যে, এটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। যেমন— আমরা অনেকেই গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করেছি। গুগল ড্রাইভ হলো একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। কয়েকটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস কোম্পানির নাম- Google Drive, Mediafire, Mega, Dropbox, i cloud, Amazon cloud ইত্যাদি।
ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা
• ক্লাউড স্টোরেজ একটি অনলাইন ভিত্তিক সার্ভিস হওয়ায় যেকোনো জায়গা থেকে সেবা গ্রহণ করা যায়।
• কোনো স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না শুধু ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হবে। প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো ব্যাকআপ (Backup) হিসাবে সংরক্ষণ করতে ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহার করা যায়।
• ক্লাউড স্টোরেজ কোম্পানিগুলো ডেটার আরেকটি কপি ব্যাকআপ হিসাবে রেখে দেয়। কোনো কারণে হার্ডডিস্ক নষ্ট হলে পুনরায় ফেরত দিতে পারে।
• ফাইলগুলো শেয়ার করা যায়। যদি কোনো গোপনীয় ফাইল থাকে তাহলে সেইগুলো সুরক্ষিত ভাবে রাখা যায়।
• ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করলে, নতুন করে মেমোরি কার্ড কেনার দরকার হয় না ।
• নির্দিষ্ট ফোল্ডারের ভেতর নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস ও ফাইলগুলো সংরক্ষণ করা যায়।
• ব্যবহার করা খুবই সহজ।
• অ্যাকাউন্ট লগইন (Login) করে যেকোনো ডিভাইস থেকে ব্যবহার করা যায়
• খরচ খুবই কম ও বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় । ফাইল এর সিকিউরিটি বেশি থাকে।
• ডিলিট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
কয়েকটি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো—
▪️গুগল ড্রাইভ (Google Drive)
গুগল ড্রাইভের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। গুগল ড্রাইভে ফ্রিতে সর্বোচ্চ ১৫ জিবি পর্যন্ত ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। একটি জিমেইল থাকলে গুগল ড্রাইভসহ গুগলের অন্যান্য সেবাসমূহ ব্যবহার করা যায়।
ফিচারসমূহ-
• বিনামূল্যে ১৫ জিবি (GB) পর্যন্ত ফাইল স্টোরেজ করা যায়।
• গুগল ডক্স, গুগল শিট, স্লাইড, গুগল ফটোস, Google synchronization, গুগল ফর্ম (Google form) ইত্যাদি ।
• রিয়েল টাইম synchronization
• ১.০২ মিলিয়ন ক্যারেক্টার ডকুমেন্ট, ৫ মিলিয়ন সেলের স্প্রেডশিট, ১০০ মেগাবাইট পর্যন্ত প্রেজেন্টেশন, প্রতি পেইজ ২০০০,০০০ ক্যারেক্টার পর্যন্ত গুগল সাইট।
• লিংক শেয়ার, কন্ট্রিবিউট ও ডাউনলোড । বিল্টইন অডিও, ভিডিও প্লেয়ার।
• বিল্টইন ভাইরাস ফাইল ম্যালওয়্যার স্ক্যানার।
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️ওয়ান ড্রাইভ (One Drive)
ওয়ান ড্রাইভ মাইক্রোসফট এর একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। যেখানে বিনামূল্যে ৫ জিবি পর্যন্ত ফাইল রাখা যায়। উইন্ডোজ ও মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ফোনে আগের থেকে ওয়ান ড্রাইভের সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে যাতে তাদের গ্রাহক সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারে।
ফিচারসমূহ
• ৫ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ সুবিধা প্রদান ।
• বিজনেস কার্ড, রিসিট, হোয়াইটবোর্ড নোট, পেপার ডকুমেন্ট স্ক্যান ও অটোমেটিক synchronization প্ৰদান ।
• লিংক শেয়ার ও ডাউনলোড সুবিধা ।
• ডাউনলোড লিংকের টাইম সেট করা।
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️ড্রপবক্স (Dropbox )
মূলত অনলাইনে কার্যক্রম শেয়ার করে কাজ করতে Dropbox অত্যন্ত কার্যকরী। মূলত: একসঙ্গে কাজ করতেই এই পার্সোনাল ক্লাউডটি তৈরি করা হয়েছে। Dropbox ওয়েবসাইট: https://www.dropbox.com/
ফিচারসমূহ
• ৫০ জিবি (GB) পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সফার;
• ম্যাক, লিনাক্স, উইন্ডোজ ও মোবাইলে সব ভার্সন বিদ্যমান;
• সকল ডিভাইসে synchronization;
• ফাইল শেয়ারিং ও ডাউনলোড;
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️মেগা (Mega)
এটি একটি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। অন্যান্য স্টোরেজের তুলনায় এটি সর্বোচ্চ ফ্রি স্পেস দেয়। Mega- তে নতুন অ্যাকাউন্ট করলে বিনামূল্যে ৫০ জিবি স্টোরেজ পাওয়া যাবে। এখানে সহজেই পার্সোনাল ফাইল, যেমন— ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায়। শুধুমাত্র ৫০ জিবি স্টোরেজ দিচ্ছে তাই নয় সেইসাথে File Protection System চালু রয়েছে। মনেকরুন, আপনার একটি ফাইল মেগাতে আপলোড করা আছে। এখন ঐ ফাইলটি যে ডাউনলোড লিংক বা শেয়ার লিংক এ আছে সেখানে সবাই ঢুকতে পারবে কি পারবে না সেটি কন্ট্রোল করার সুবিধা রয়েছে।
ফিচারসমূহ
• Mega তে ৫০ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ:
• ফাইল এনক্রিপশন (Encryption) ও চ্যাট সিস্টেম;
• লিংক শেয়ার ও ডাউনলোড সিস্টেম;
• ফাইল ও ফোল্ডার সিঙ্ক;
• প্রতি ৬ ঘন্টায় ১ জিবি পর্যন্ত ডেটা Transfer (আপলোড / ডাউনলোড);
▪️পিক্লাউড (pCloud)
অত্যন্ত সিকিউরড ও সিম্পল ইন্টারফেসের একটি ক্লাউড স্টোরেজ প্রোভাইডার হলো পিক্লাউড (pCloud)। এটিতে ফাইল শেয়ার ও কন্ট্রিবিউট (Contribute) করার অপশন আছে। এটিতে ওয়েব ও এন্ড্রয়েড অ্যাপ রয়েছে। pCloud ওয়েবসাইট : https://www.pcloud.com/
ফিচারসমূহ
• স্টোরেজের পরিমাণ ১০ জিবি;
• ফাইল ফরমেট অনুযায়ী আলাদা করা;
• বিল্ট ইন অডিও/ভিডিও প্লেয়ার;
• দুই লেয়ার ডেটা এনক্রিপশন সিস্টেম বিদ্যমান;
• অটোমেটিক আপলোড;
• লিংক শেয়ার ও ডাউনলোড অপশন;
• ডাউনলোড পাসওয়ার্ড সেট ও এক্সপায়ার্ড টাইম দেওয়া;
• কতবার লিংক দেখা ও ডাউনলোড হলো সেটির হিসাব;
• বিজ্ঞাপন মুক্ত।
▪️মিডিয়াফায়ার ডট কম (Mediafire.com )
মিডিয়াফায়ার ডট কম একটি জনপ্রিয় ফাইল স্টোরেজ সাইট। মিডিয়াফায়ারের ইন্টারফেস সুন্দর ও সহজ, ফলে তাদের দেওয়া অপশন গুলো যেকেউ বুঝতে পারে। মিডিয়াফায়ার বিনামূল্যে ১০ জিবি পর্যন্ত স্পেস দিয়ে থাকে। কিন্তু একাধিক অ্যাকাউন্ট করার মাধ্যমে স্পেস বাড়ানো যেতে পারে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে।
▪️ইয়ানডেক্স ডিস্ক (Yandex Disk )
Yandex একটি ক্লাউড স্টোরেজ হওয়ার পাশাপাশি একটি সার্চ ইঞ্জিন। এটি মেইল সার্ভিস প্রদান করে থাকে। বিনামূল্যে ১০ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্পেস পাওয়া যায়।
Read more